মানিকগঞ্জের হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। জেলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৩ শতাধিক শীতজনিত রোগী চিকিৎসকের শরনাপন্ন হচ্ছেন। এছাড়া হাসপাতালের বেডে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক শীতজনিত রোগী ভর্তি থাকছেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শীতজনিত সমস্যা নিয়ে আসা রোগীদের বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক। এমতাবস্থায় বেডের ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ের সূত্রমতে, ২৫০ শয্যার জেলার জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ জন বিভিন্ন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। এদের মধ্যে ৬০ ভাগই শীতজনিত রোগী।
তিনি বলেন,নবজাতক ও শিশু ওয়ার্ডে ঠান্ডা, কাশি, ডায়রিয়ায়, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বেশির ভাগ ভর্তি হচ্ছে শিশুরোগী। স্থান সংকুলন না হওয়ায় অনেক শিশুরোগীকে ভর্তি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অনেকেই প্রাইভেট ক্লিনিক কিংবা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকে। ওই সময় থেকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীও বাড়তে থাকে। ডিসেম্বর মাসের পুরোটা সময়ে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেশ বেড়ে যায়। বহির্বিভাগ ও ভর্তিরোগী বাড়তে থাকে আশঙ্কজনক হারে।
আরও পড়ুন: নীলফামারীতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে
মানিকগঞ্জ জেলা ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এবিএম তৌহিদুজ্জামান বলেন, শীতজনিত রোগে আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক।
গত ডিসেম্বর মাসে বহির্বিভাগে প্রায় ৯ হাজার শীতজনিত রোগীর মধ্যে ২ হাজার ১১২ জন শিশু ও ৯৭২ জন বয়স্ক রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। একই সময় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত রোগে আরও ২২৫ শিশু ও ৮৮ বয়স্ককে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে।
আর চলতি মাসের ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বহির্বিভাগে প্রায় তিন হাজার শীতজনিত রোগীর মধ্যে ১ হাজার ৬২ জন শিশু ও ৩১৬ জন বয়স্ক রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। একই সময়ে ডায়রিয়া ওয়ার্ড, শিশু ও নবজাতক বিভাগে ভর্তি হওয়ায় ৭১৫ শিশু ও ৩৮২ জন বয়োবৃদ্ধকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হুমায়ুন কবির বলেন, শীতে কুয়াশা, ধুলাবালির মধ্যে ব্যাকটেরিয়া ঘুরে বেড়ায়। কুয়াশার কারণে ব্যাকটেরিয়া ওপরে উঠতে পারে না, নিচে ঘুরে বেড়ায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসগুলো খুব সহজেই মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। সাধারণত লোটা ভাইরাসের কারণে শিশু ও বয়স্কদের ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এছাড়া ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, ব্রঙ্কাইটিস, ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস শিশু ও বয়স্কদের সহজেই আক্রান্ত করে। নিউমোনিয়ার কারণে যেসব ভাইরাসগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেগুলো সহজেই শ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসকে আক্রান্ত করছে।
জেলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. বদরুল আলম বলেন, শয্যার অতিরিক্ত রোগীকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের মেঝেতে চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে। এতে হিমশিমে পড়তে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের। সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে। নির্ধারিত ২০ বেডের অতিরিক্ত আরও ১০ থেকে ১৫ জন রোগীকে মেঝেতে চিকিৎসা দিতে হয়।
আরও পড়ুন: শীতজনিত রোগে মাগুরার হাসপাতালগুলোতে শিশু ও বয়স্ক রোগীর ভিড়